




Tajhat Palace বা তাজহাট রাজবাড়ি বাংলাদেশের রংপুর শহরের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মোঘল ও ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব সংমিশ্রণে নির্মিত এই রাজবাড়ি প্রাচীন জমিদারি সংস্কৃতি এবং রাজকীয় ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। বর্তমানে এটি জাতীয় জাদুঘরের শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।
তাজহাট রাজবাড়ির অবস্থান
তাজহাট রাজবাড়ি কোথায় অবস্থিত?
এটি রংপুর জেলা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে, তাজহাট এলাকায় এই রাজবাড়িটি অবস্থিত।
- ঠিকানা: তাজহাট, রংপুর সদর, রংপুর
- নিকটবর্তী স্থান: রংপুর চিড়িয়াখানা, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল
তাজহাট রাজবাড়ির ইতিহাস
তাজহাট রাজবাড়ি ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, বিখ্যাত হীরা ব্যবসায়ী মন্নালাল রায় ২০ শতকের শুরুতে রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি পেশায় হীরার ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তার বিপুল সম্পদের কারণে রাজ উপাধি লাভ করেন। এই রাজবাড়ির নির্মাণশৈলীতে প্রভাব রয়েছে ইউরোপীয় নকশার, যা তার রুচিশীলতা এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করে।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে ব্যবহার
- ব্রিটিশ শাসনামলে এটি ছিল জমিদারদের বসবাসের স্থান।
- পাকিস্তান আমলে এটি প্রশাসনিক কাজেও ব্যবহৃত হয়েছে।
- বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিত্যক্ত থাকলেও ২০০৫ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
Tajhat Palace এর স্থাপত্যে ব্যবহৃত হয়েছে মার্বেল পাথর, যা রাজবাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। প্রধান ভবনের সম্মুখভাগে একটি বড় সিঁড়ি ও বিশাল খিলান রয়েছে। ভবনের সামনের অংশে বাগান ও ফোয়ারা স্থাপিত আছে।
মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- বিশাল কেন্দ্রীয় গম্বুজ
- গ্রিক পিলারযুক্ত প্রবেশপথ
- মার্বেল নির্মিত সিঁড়ি
- ছাদের উপর লাল রঙের গোলাকার গম্বুজ
- নিচতলায় বিভিন্ন কক্ষ ও গোপন করিডোর
তাজহাট জাদুঘর
২০০৫ সালে তাজহাট রাজবাড়িকে জাতীয় জাদুঘরের শাখা জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানে সংরক্ষিত আছে:
- প্রাচীন পুঁথি ও হস্তলিখিত কুরআন শরীফ
- মুঘল ও তুর্কি আমলের শিল্পকর্ম
- তাজহাট জমিদারদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র
- পুরাকীর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
কিভাবে যাবেন তাজহাট রাজবাড়িতে?
তাজহাট রাজবাড়ি কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে রংপুরে বাস বা ট্রেনে যাওয়া যায় এবং সেখান থেকে রিকশা বা অটোতে তাজহাট রাজবাড়ি পৌঁছানো যায়।
- ঢাকা → রংপুর: বাসে ৮-১০ ঘণ্টা, ট্রেনে ৭-৮ ঘণ্টা
- রংপুর শহর → তাজহাট: ১০-১৫ মিনিট অটো রিকশায়
প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচি
বিষয় | তথ্য |
---|---|
খোলার দিন | মঙ্গলবার – শনিবার |
বন্ধ থাকে | রবিবার ও সরকারি ছুটির দিন |
সময় | সকাল ১০টা – বিকেল ৬টা |
প্রবেশ মূল্য | প্রাপ্তবয়স্ক: ২০ টাকা, বিদেশি: ১০০ টাকা, শিক্ষার্থী: ৫ টাকা |
ঘোরার জন্য কেন তাজহাট রাজবাড়ি উপযুক্ত?
- ইতিহাস ও স্থাপত্য ভালোবাসেন এমন ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ
- পরিবার নিয়ে ভ্রমণের জন্য নিরাপদ পরিবেশ
- ফটোশুট ও শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয়
- রংপুরে ঘোরার জায়গার মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় স্থান
রংপুরে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
তাজহাট ভ্রমণের পাশাপাশি রংপুরে ঘুরে দেখা যেতে পারে:
- কারমাইকেল কলেজ – উপনিবেশিক আমলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
- রংপুর চিড়িয়াখানা – শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান
- ভিন্ন জগৎ থিম পার্ক – আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র
জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর (People Also Ask)
প্রশ্ন: তাজহাট রাজবাড়ি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: এটি রংপুর জেলার তাজহাট এলাকায় অবস্থিত, শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে।
প্রশ্ন: তাজহাট রাজবাড়ি কে নির্মাণ করেন?
উত্তর: ধনী হীরা ব্যবসায়ী মন্নালাল রায় এটি ২০ শতকের শুরুতে নির্মাণ করেন।
প্রশ্ন: এখানে কি জাদুঘর আছে?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরের শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন: কীভাবে তাজহাট রাজবাড়ি যাব?
উত্তর: ঢাকা থেকে বাস/ট্রেনে রংপুর এবং সেখান থেকে অটো বা রিকশা করে রাজবাড়িতে যাওয়া যায়।
প্রশ্ন: তাজহাট রাজবাড়ি কখন খোলা থাকে?
উত্তর: মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত খোলা থাকে; রবিবার বন্ধ।
উপসংহার
Tajhat Palace বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এর স্থাপত্যশৈলী, ইতিহাস এবং সংগ্রহশালার উপাদান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তোলে। যারা ইতিহাস ভালোবাসেন বা রংপুরে ঘুরতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য তাজহাট রাজবাড়ি অবশ্যই দর্শনীয় স্থান।
এই রাজবাড়ি শুধু পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জমিদারি ঐতিহ্য এবং শিল্প-সংস্কৃতির মূল্যবান নিদর্শন হিসেবে আজও সমান গুরুত্ব বহন করে চলেছে।