Menu

কান্তজিউ মন্দির: ইতিহাস, স্থাপত্য ও ভ্রমণ নির্দেশিকা

পরিচিতি

কান্তজিউ মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। এটি একটি হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়, যা অষ্টাদশ শতকে নির্মিত হয়। কান্তজিউ মন্দির তার টেরাকোটা নকশা, নিখুঁত স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি শ্রীকৃষ্ণের নামে উৎসর্গীকৃত এবং এটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র।

কান্তজিউ মন্দির কোথায় অবস্থিত?

কান্তজিউ মন্দিরটি দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত। এটি কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত বলে এটির নামকরণ হয়েছে কান্তজিউ মন্দির।

কান্তজিউ মন্দিরের ইতিহাস

কে নির্মাণ করেন কান্তজিউ মন্দির?

এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথ। তার মৃত্যুর পর, তার দত্তক পুত্র রাজা রামনাথ ১৭৫২ সালে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। এটি নির্মাণে প্রায় ৩০ বছর সময় লেগেছিল। মন্দিরটি মূলত শ্রীকৃষ্ণকে উৎসর্গ করে নির্মিত হয়, এবং মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

কান্তজিউ মন্দিরের স্থাপত্য

কেমন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত?

কান্তজিউ মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী মূলত নবরত্ন শৈলীতে নির্মিত। এটি ছিল তিনতলা বিশিষ্ট এবং প্রতিটি স্তরে তিনটি করে চূড়া ছিল, অর্থাৎ মোট নয়টি চূড়া। তবে ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরের উপরের অংশ ধসে পড়ে এবং বর্তমানে এর শুধুমাত্র নিচের অংশটিই টিকে আছে।

টেরাকোটার কারুকাজ

মন্দিরটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর টেরাকোটা অলঙ্করণ। মন্দিরের চারপাশে টেরাকোটায় খোদাই করে রামায়ণ, মহাভারত, কৃষ্ণলীলা, শিকার দৃশ্য, সামাজিক জীবন ও প্রাকৃতিক দৃশ্য অঙ্কিত হয়েছে। প্রতিটি ইটের উপরে সূক্ষ্মভাবে এসব দৃশ্য খোদাই করা, যা বাংলাদেশের স্থাপত্য ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।

কান্তজিউ মন্দিরে কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে কান্তজিউ মন্দির

ঢাকা থেকে প্রথমে বাস অথবা ট্রেনে দিনাজপুর যেতে হবে। দিনাজপুর শহর থেকে অটো, সিএনজি বা মাইক্রোবাসে কান্তনগর যেতে পারবেন।

  • বাস: গাবতলী বা কল্যাণপুর থেকে হানিফ, এস আর ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি বাসে দিনাজপুর
  • ট্রেন: একতা, রংপুর এক্সপ্রেস, ডোলনচাঁপা ট্রেনে দিনাজপুর

কান্তজিউ মন্দিরে ঘোরার সময়সূচি

মন্দিরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। কোনো প্রবেশমূল্য নেই, তবে মন্দিরে প্রবেশের সময় ভদ্রতা ও নীরবতা বজায় রাখা উচিত।

আশেপাশে আরও কি কি দর্শনীয় স্থান আছে?

১. রামসাগর দীঘি – কান্তজিউ মন্দির থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে অবস্থিত বিশাল দীঘি
2. দিনাজপুর রাজবাড়ি – প্রাচীন রাজাদের বাসভবন
3. হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস – ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে

কান্তজিউ মন্দির সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

কান্তজিউ মন্দির কে নির্মাণ করেছেন?

রাজা প্রাণনাথ এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং তার দত্তক পুত্র রাজা রামনাথ ১৭৫২ সালে এটি শেষ করেন।

কান্তজিউ মন্দির কেন বিখ্যাত?

এর টেরাকোটা অলঙ্করণ ও নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীর জন্য এটি বিখ্যাত।

কান্তজিউ মন্দির কোথায়?

মন্দিরটি দিনাজপুর জেলার কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত, যা দিনাজপুর সদর থেকে ২০ কিমি দূরে।

কান্তজিউ মন্দিরে কি প্রবেশমূল্য আছে?

না, এখানে প্রবেশ একেবারেই ফ্রি।

কান্তজিউ মন্দির ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন?

শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) এই মন্দির ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত, কারণ আবহাওয়া শীতল ও মনোরম থাকে।

কান্তজিউ মন্দির ভ্রমণের পরামর্শ

  • মন্দির এলাকা পবিত্র স্থান, তাই পোশাক ও আচরণে শালীনতা বজায় রাখা আবশ্যক।
  • টেরাকোটা শিল্প রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। গায়ে হাত না দেওয়াই উত্তম।
  • যদি দিনাজপুরে রাতযাপন করতে চান, তবে শহরে ভালো মানের হোটেল যেমন হোটেল হানস প্লাজা, হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল পাওয়া যায়।

উপসংহার

কান্তজিউ মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও শিল্পের এক মহামূল্যবান নিদর্শন। দিনাজপুরে ভ্রমণের সময় এই মন্দিরটি অবশ্যই দর্শনীয়। যারা বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্থাপত্যে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *