Menu
সোমপুর মহাবিহার

সোমপুর মহাবিহার – পাহাড়পুরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়

সোমপুর মহাবিহার

সোমপুর মহাবিহার (Sompur Mahavihara) দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ স্থাপত্য নিদর্শন। এটি বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। এই বিহারটি একসময় ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল এবং এখনও তা ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং পর্যটন দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সোমপুর বিহারের ইতিহাস কী?

সোমপুর মহাবিহারের ইতিহাস শুরু হয় ৮ম শতাব্দীতে পাল রাজবংশের শাসনামলে। এই বিহারটি নির্মাণ করেছিলেন পাল রাজা ধর্মপাল (৭৭০–৮১০ খ্রিষ্টাব্দ)। ধর্মপাল ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের একজন উর্ধ্বতন পৃষ্ঠপোষক এবং তার রাজত্বকালে বহু বিহার ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। সোমপুর মহাবিহার ছিল তার অন্যতম সেরা কীর্তি।

বিহারটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শিক্ষা ও সাধনার উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান। এক সময়ে এখানে প্রায় ২০০ জনের অধিক ভিক্ষু ও ছাত্র বসবাস করতেন এবং এটি ছিল মহাযান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

পাহাড়পুর নামটা কিভাবে হলো?

‘পাহাড়পুর’ নামটি এসেছে এলাকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য থেকে। সোমপুর মহাবিহার স্থাপনার মূল কেন্দ্রীয় স্তূপটি ধ্বংস হয়ে ধীরে ধীরে একটি উঁচু টিলার (পাহাড়ের) মতো আকার ধারণ করে। স্থানীয় মানুষ এই বড় স্তূপটিকে ‘পাহাড়’ বলে চিহ্নিত করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে এলাকা পরিচিত হয় ‘পাহাড়পুর’ নামে।

সোমপুর বিহার কোথায় অবস্থিত?

সোমপুর মহাবিহার বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। এটি বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং জয়পুরহাট শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ – আপনি বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত যানবাহনে এখানে পৌঁছাতে পারবেন।

সোমপুর বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় অবস্থিত?

প্রাচীনকালে সোমপুর মহাবিহার ছিল এক ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ধর্ম, দর্শন, চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতেন। যদিও এখন এটি কার্যকর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র।

বর্তমানে, সোমপুর মহাবিহার বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত একটি ঐতিহাসিক স্থান।

ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার কোনটি?

সোমপুর মহাবিহার-ই ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ বিহার হিসেবে পরিচিত। এর স্থাপত্যিক গঠন, আয়তন, এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব এটিকে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অন্যান্য বিহার থেকে আলাদা করে তোলে।

পুরো বিহার এলাকা প্রায় ২৭,৮৭৫ বর্গমিটার। এটি একটি চৌকো আকারের প্রাচীর ঘেরা প্রাঙ্গণ, যার কেন্দ্রে একটি বিশাল স্তূপ এবং চারদিকে কক্ষ ও বারান্দা রয়েছে। এর গঠন অনেকটা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কোথায় অবস্থিত?

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর গ্রামে। এটি একসময় বৃহৎ বৌদ্ধ জনপদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। এখানে খননকাজ চালিয়ে অনেক মূল্যবান মুদ্রা, টেরাকোটা ফলক, ব্রোঞ্জের মূর্তি ও অনন্য শিল্পকর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে।

১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো সোমপুর মহাবিহারকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান (UNESCO World Heritage Site) হিসেবে ঘোষণা করে।

দর্শনার্থীদের জন্য তথ্য

সোমপুর মহাবিহার পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে বছরের বেশিরভাগ সময়। এখানে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরও রয়েছে যেখানে পাওয়া শিল্পকর্ম ও নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। শীতকালে এখানে পর্যটকের ভিড় বেশি হয়। এই এলাকাটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষামূলক স্থান।

সময়সূচি (Opening Hours)

পাহাড়পুর প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের সান্নিধ্যে অবস্থিত এই জাদুঘরে পাহাড়পুর ও আশেপাশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল থেকে সংগ্রহ করা ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করা হয়।

ছুটির দিন:
শনি ও রবিবার প্রতিটি সপ্তাহে ছুটি। এছাড়াও সরকার ঘোষিত সকল ছুটির দিনে জাদুঘর বন্ধ থাকে।

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর
  • সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত
    (দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি)
  • শুক্রবার: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত
    (দুপুর ১২:৩০ থেকে ২:৩০ পর্যন্ত খাবার ও নামাজের বিরতি)
অক্টোবর থেকে মার্চ
  • সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত
    (দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি)
  • শুক্রবার: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত
    (দুপুর ১২:৩০ থেকে ২:৩০ পর্যন্ত খাবার ও নামাজের বিরতি)
রমজানের সময়সূচি

রমজানে, শুক্রবার ব্যতীত বাকি দিনগুলোতে জাদুঘর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

সোমপুর মহাবিহারের স্থাপত্য

বিহারের কেন্দ্রে একটি বিশাল স্তূপ রয়েছে, যা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক। চারপাশে রয়েছে মোট ১৭৭টি কক্ষ যা সাধনায় রত ভিক্ষুদের থাকার জন্য ব্যবহৃত হতো। বিহারের দেয়ালে টেরাকোটা ফলকে চিত্রিত করা হয়েছে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন কাহিনি, যা তখনকার সমাজ ও সংস্কৃতির একটি চিত্র তুলে ধরে।

গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব

সোমপুর মহাবিহার শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল না, এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষকরা মনে করেন, নালন্দা ও বিক্রমশীলা বিহারের পাশাপাশি এটি ছিল তৎকালীন সময়ের সর্বোচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে খননকাজে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলি ইতিহাস গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে পাহাড়পুর

সোমপুর মহাবিহার বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এটি কেবলমাত্র একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা নয়, বরং এটি আমাদের অতীত ইতিহাস, ধর্মীয় সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক সংযোগের একটি জীবন্ত দলিল। পাহাড়পুরে অবস্থিত এই মহাবিহার এখনও বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে গৌরবের সাথে উপস্থাপন করে চলেছে।

কিভাবে সোমপুর মহাবিহার ঘুরতে যাবেন ?

আপনি যদি সোমপুর মহাবিহার ঘুরতে যেতে চান, তবে ঘুরাঘুরি৩৬৫ (ghuraghuri365.com) এর মাধ্যমে আপনার ট্রিপটি হতে পারে আরও সহজ ও স্মরণীয়। আমাদের অভিজ্ঞ ট্যুর গাইড, নির্ভরযোগ্য পরিবহন, মানসম্পন্ন থাকার ব্যবস্থা এবং সুপরিকল্পিত সময়সূচি আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে ঝামেলাহীন ও উপভোগ্য। ঢাকা বা দেশের যেকোনো স্থান থেকে আমরা আয়োজন করে থাকি ভ্রমণের জন্য বিশেষ প্যাকেজ। পরিবার, বন্ধু বা শিক্ষামূলক ট্যুর—সব ধরণের ট্যুরের জন্য রয়েছে কাস্টম প্যাকেজ সুবিধা।

যেকোনো তথ্য বা বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন!

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *