Menu
ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক

ভূমিকা

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক (Bhawal National Park) বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যা বাংলাদেশের বনবিভাগের অধীনে পরিচালিত হয়। মধুপুর গড় (Madhupur Tract)-এর একটি অংশ হিসেবে এটি পূর্বে ছিল ভাওয়াল স্টেট-এর বনভূমি। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাক্ট অনুযায়ী এটি জাতীয় উদ্যানে রূপান্তরিত হয়।

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক ইতিহাস ও কার্যক্রম

এই বনাঞ্চলটি ১৯৭৪ সালে প্রথম সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়। এটি মধুপুর গড়ের ভাওয়াল অংশে অবস্থিত এবং প্রায় ৫,০২২ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যার কেন্দ্রীয় অঞ্চল ৯৪০ হেক্টর এবং বাফার জোনসহ বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে আছে।

ভৌগলিক অবস্থান ও পরিবেশ

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক ঢাকা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর দিকে গাজীপুরে অবস্থিত, গাজীপুর ও কাপাসিয়া থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে । এখানে অবস্থিত বনভূমিটি ছোট পাহাড়-চালা (চালা) ও বায়দ (দোচালা জমি) নিয়ে গঠিত, যা স্থানীয়ভাবে পানির নিন্মভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

জীববৈচিত্র্য (Flora ও Fauna)

উদ্ভিদবিজ্ঞান (Flora)

ভাওয়াল প্রাকৃতিকভাবে মূলত শাল বনভূমি যেটি সলোশ (Shorea robusta) দ্বারা আধিপত্য বিস্তার করে। বন বিভাগের পুনঃস্থাপনায় একাধিক এক্সোটিক গাছ যেমন ইউক্যালিপটাস, একাতানিয়া ও অ্যাকেশিয়া রোপণ করা হয়। গবেষণায় ৩৪৫ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১৫১টি গাছ, ৫৩টি ঝোপঝাড়, ১০৬টি গুল্ম এবং ৩৪টি লতা রয়েছে ।

প্রাণিবিজ্ঞান (Fauna)

ইতিহাসে এখানে বন্যপ্রাণীর শামিল ছিল: পাঁদা ময়ূর, বাঘ, সিংহপ্যান্থার, হাতি ও সাঁবর হরিণ অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে অনেক জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেয়েছে; বর্তমানে পাওয়া যায় সিকুইরেল, বানর, হরিঁ, শিয়াল, Civet, Monitor lizard, ছিটে কিছু পাখি ও সাপের প্রজাতি।

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক দর্শনীয় স্থান ও কার্যক্রম

বনভূমি ও পথচারিতা

বিস্তৃত বনভূমিতে হাঁটার ডাঙা পথ রয়েছে যা পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সাজানো। সাধারণত এসব ট্রেইলের দৈর্ঘ্য ৬–১০ কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

হ্রদ ও জলাশয়

পার্কে কয়েকটি কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক জলাশয় আছে—সেগুলোতে নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরা ও পিকনিকে যাওয়ার সুযোগ আছে।

পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও বন বিভাগ অফিস

পার্কের মধ্যে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, থেকে চারপাশের বন দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা যায়। স্থানীয় বন বিভাগের অফিস ও বিশ্রামাগার আছে পর্যটকদের জন্য।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গবেষণা

উদ্যান পরিচালনায় গবেষণা ও শিক্ষা সাপোর্ট দিয়ে থাকেন বন বিভাগ ও গবেষকরা। মাঝে মাঝে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য লেকচার ও ফিল্ড ট্রিপ থাকে।

ভাওয়াল উদ্যান কোথায় ও কীভাবে যাবেন

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে, রাজেন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে যাতায়াতের নিম্নলিখিত উৎস রয়েছে:

  • বাসে: ঢাকার বিভিন্ন সার্ভিস (বিশ্ববিদ্যালয়, রাজেন্দ্রপুর) দ্বারা সরাসরি গাজীপুর, এরপর রিকশা বা ‘ইজি বাইক’ করে পৌঁছানো যায়।
  • নিজস্ব গাড়িতে: ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে উত্তর দিকে গিয়ে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় পৌঁছে রাস্তাবিহারে নির্দেশ অনুসরণ করে পার্কে যাওয়া যায় evendo.com

ভ্রমণের সেরা সময়

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময় হলো নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময় আবহাওয়া মনোরম এবং বৃষ্টিপাত কম থাকে, ফলে বনভূমি অতিক্রম করা সহজ হয়।

প্রবেশ ফি, নিয়ম ও নিরাপত্তা পরামর্শ

বর্তমানে পার্কে প্রবেশ ফি নেই, তবে নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক। পার্কের যত্নে বন বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী:

  • নির্ধারিত পথে চলুন, বনভূমির নির্জন/বোনা অংশে প্রবেশ টালা।
  • কোনো খাবার, পলিথিন বা বর্জ্য ভিতরে ফেলা নিষিদ্ধ।
  • ক্যাম্পিং বা অগ্নিপ্রয়োগ বনাঞ্চলে নিষিদ্ধ।
  • ছবি তোলা স্বল্পাংশে অনুমোদিত, তবে মৌলিক স্থাপনা ও গাছপালা ক্ষুণ্ন করা যাওয়া চলবে না।

ভাওয়াল উদ্যান সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (People Also Ask)

প্রশ্ন ১: ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: গাজীপুর জেলায়, ঢাকা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিমি উত্তর দিকে, রাজেন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে Wikipediaevendo.com

প্রশ্ন ২: ভাওয়াল উদ্যান কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৮২ সালে “বাংলাদেশ ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাক্ট ১৯৭৪” অনুযায়ী জাতীয় উদ্যানে রূপ দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৩: এখানে কি কিছু বৃহৎ প্রাণী দেখা যায়?
উত্তর: প্রতিৎতিহাসে এখানে বাঘ, হাতি, পাঁদা ময়ূর ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা হারিয়ে গেছে; এসএম‌এল স্তরে শেয়াল, Civet, বানর ও সিকুইরেল দেখা যায়।

প্রশ্ন ৪: ভাওয়াল উদ্যান দেখতে কত সময় লাগবে?
উত্তর: সাধারণভাবে ৩–৪ ঘণ্টায় মূল ট্রেইল ও পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট পরিদর্শন করা সম্ভব হয়।

উপসংহার

ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া শাল বন এবং জীববৈচিত্র্যের রক্ষাকেন্দ্র। এটি শুধুমাত্র একটি বনবিভাগের এলাকা নয় বরং প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক ও শিক্ষা মূলক এক গন্তব্য। যারা প্রকৃতি, বন, পরিবেশ বা প্রকৃতির সঙ্গে নৈসর্গিক সম্পর্ক চিনে নিতে চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ গন্তব্য। সঠিক পরিকল্পনা ও সচেতন আচরণে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চয় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *