Menu
বাঘা শাহী মসজিদ

বাঘা শাহী মসজিদ

বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার অন্তর্গত বাঘা উপজেলায় অবস্থিত বাঘা শাহী মসজিদ দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক ইসলামিক স্থাপত্য। এটি সুলতানি আমলের নিদর্শন, যা স্থাপত্যরীতির দিক থেকে আজও আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয়। এই মসজিদটির নাম ইতিহাসের পাতায় বহুবার উঠে এসেছে এবং এখনও এটি পর্যটকদের এক উল্লেখযোগ্য গন্তব্যস্থল।

বাঘা শাহী মসজিদের ইতিহাস

বাঘা শাহী মসজিদ নির্মাণ করা হয় হোসেন শাহ বংশের রাজত্বকালে, ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে। এটি নির্মাণ করেন সুলতান নাসিরউদ্দিন নসরত শাহ। এই মসজিদ মূলত ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে এটি became a symbol of architectural and cultural heritage.

কারা নির্মাণ করেছিলেন?

ইতিহাসবিদদের মতে, সুলতান নসরত শাহ নিজেই মসজিদটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং এটি নির্মাণে দক্ষ কারিগরদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হয়েছিল টেরাকোটা ইট, খিলান, গম্বুজ এবং শিলালিপি।


স্থাপত্যশৈলী

নির্মাণ উপকরণ ও ডিজাইন

মসজিদটি আয়তাকার এবং সম্পূর্ণরূপে লাল টেরাকোটা ইটে নির্মিত। দেয়ালে রয়েছে নকশা খচিত অলংকরণ, কোরআনিক আয়াতের খোদাই এবং দৃষ্টিনন্দন ফুল-লতা।

গম্বুজ ও খিলান

মসজিদটিতে রয়েছে ১০টি গম্বুজ এবং প্রতিটি গম্বুজ স্থাপত্যিক শৈলীর নিদর্শন। পূর্বপাশে ৫টি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ আছে যা মুসল্লিদের নামাজের জন্য প্রবেশের সুবিধা দেয়।

টেরাকোটা অলংকরণ

বাঘা শাহী মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর টেরাকোটা কারুকাজ। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ফুল, লতা, জ্যামিতিক নকশা এবং আরবি ক্যালিগ্রাফি।

অবস্থান ও পরিবেশ

বাঘা শাহী মসজিদ অবস্থিত রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায়, রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। এটি পদ্মা নদীর কাছাকাছি অবস্থিত এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যও মনোমুগ্ধকর।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে রাজশাহী পৌঁছে সেখান থেকে লোকাল বাস, মাইক্রোবাস বা রিকশায় করে বাঘা মসজিদে যাওয়া যায়। ভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি আরামদায়ক এবং স্বল্প বাজেটের গন্তব্য।

বাঘা শাহী মসজিদ ভ্রমণ গাইড

ভ্রমণের সময়

শীতকাল (নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি) ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এসময় আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে এবং পর্যটক সমাগমও হয় বেশি।

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
  • বাঘা মাজার শরীফ
  • পদ্মা নদীর তীর
  • রাজশাহী শহরের বারিন্দ ট্র্যাক অঞ্চল
  • পুঠিয়া রাজবাড়ী
সময়সূচি ও প্রবেশ ফি

এটি একটি উন্মুক্ত ঐতিহাসিক স্থান, তবে কিছু অংশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কোনো প্রবেশ ফি নেই।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

ধর্মীয় গুরুত্ব

বাঘা শাহী মসজিদ এখনও সক্রিয় ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জুমা ও ঈদের নামাজে প্রচুর মানুষ অংশগ্রহণ করে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

এই মসজিদ সুলতানি আমলের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় গুরুত্বের প্রতিফলন। মসজিদের সংরক্ষিত টেরাকোটা ও খোদাই আজও ইতিহাস চর্চায় ব্যবহৃত হয়।

গবেষণামূল্য

স্থাপত্য শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি জীবন্ত উদাহরণ। এখানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা সফরে আসেন।

প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর (People Also Ask)

বাঘা শাহী মসজিদ কোথায় অবস্থিত?

রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায়, রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে।

বাঘা শাহী মসজিদ কে নির্মাণ করেছিলেন?

সুলতান নাসিরউদ্দিন নসরত শাহ ১৫২৩ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন।

মসজিদের গম্বুজ সংখ্যা কতটি?

মোট ১০টি গম্বুজ রয়েছে।

এখানে এখনো নামাজ পড়া হয় কি?

হ্যাঁ, এটি এখনো সক্রিয় মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাঘা শাহী মসজিদ কেন বিখ্যাত?

টেরাকোটা শিল্প, গম্বুজ স্থাপত্য, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং এর ধর্মীয় গুরুত্ব একে বিখ্যাত করেছে।

উপসংহার

বাঘা শাহী মসজিদ বাংলাদেশের ইসলামিক স্থাপত্যের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। রাজশাহীর এই ঐতিহাসিক মসজিদে ইসলামী স্থাপত্যরীতি, ধর্মীয় গুরুত্ব এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। এটি শুধু ভ্রমণপ্রেমীদের নয়, ইতিহাস অনুরাগী ও স্থাপত্যবিদদের কাছেও এক মূল্যবান সম্পদ।

যারা বাংলাদেশের ইসলামিক স্থাপত্য ঘুরে দেখতে আগ্রহী, তাদের জন্য বাঘা শাহী মসজিদ একটি অবশ্যই দর্শনীয় স্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *