Menu
বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম (Varendra Research Museum)

ভূমিকা

বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম। এটি রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং দেশের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস, শিল্পকলা, ধর্মীয় নিদর্শন এবং সভ্যতার বিবর্তনের বহু অমূল্য নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত রয়েছে।

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামের ইতিহাস

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামের যাত্রা শুরু হয় ১৯১০ সালে, যখন রাজশাহী কলেজের অধ্যাপক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, রামাপ্রসাদ চন্দ্র এবং সার ফ্রান্সিস ব্র্যাডলি বার্লট একত্র হয়ে এই জাদুঘরের ভিত্তি স্থাপন করেন। তারা বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ইতিহাস সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

এই জাদুঘরটি প্রথমে একটি গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে পরিণত হয় এবং বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

অবস্থান ও পরিবেশ

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম অবস্থিত রাজশাহী মহানগরের হৃদয়ে, রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটে। এটি সহজেই পৌঁছানো যায় এবং পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত স্থানে অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে বা বাসে রাজশাহী যাওয়া যায়। শহরের ভেতরে রিকশা বা সিএনজিতে বরেন্দ্র মিউজিয়ামে পৌঁছানো যায়। কাছাকাছি রয়েছে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।

বরেন্দ্র মিউজিয়ামের গ্যালারি ও সংগ্রহ

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্যালারি, যেগুলোর প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজানো।

১. প্রাচীন মূর্তিশিল্প

এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মীয় প্রাচীন মূর্তি সংরক্ষিত আছে। মূর্তিগুলো পাথর, ব্রোঞ্জ ও টেরাকোটায় নির্মিত এবং একাধিক সময়কালকে প্রতিনিধিত্ব করে।

২. ইসলামিক গ্যালারি

মুগল ও সুলতানি আমলের মসজিদের খিলান, শিলালিপি, পোড়ামাটির ফলক ও কোরআনিক খোদাই এখানে প্রদর্শিত হয়।

৩. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

বরেন্দ্র অঞ্চল এবং পাহাড়পুর, ময়নামতি, মহাস্থানগড়ের খননকৃত নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত। রয়েছে প্রাচীন টেরাকোটা, সীল, মুদ্রা, অস্ত্র এবং গৃহস্থালির জিনিসপত্র।

৪. পাণ্ডুলিপি ও পত্রাদি

সংগ্রহে রয়েছে প্রাচীন আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষার হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, যা বাংলার শিক্ষাগত ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল দিক।

ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব

ধর্মীয় গুরুত্ব

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে বিভিন্ন ধর্মীয় নিদর্শনের মাধ্যমে বোঝা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চল ছিল বহু ধর্মের মিলনস্থল।

সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

বাংলা ভাষা, পোশাক, অলংকার এবং জীবনধারার পরিবর্তন বোঝা যায় এই জাদুঘরের প্রদর্শিত নিদর্শন থেকে। এটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অপূর্ব নিদর্শন।

গবেষণামূলক গুরুত্ব

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গবেষক এবং প্রত্নতত্ত্ববিদদের জন্য এটি এক মূল্যবান সম্পদ। এখান থেকে বহু গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে।

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্নোত্তর (People Also Ask)

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম কোথায় অবস্থিত?

এটি রাজশাহী শহরের সাহেব বাজার এলাকায় অবস্থিত, রাজশাহী কলেজের পাশে।

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

১৯১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর।

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে কী কী দেখা যায়?

এখানে প্রাচীন মূর্তি, পাণ্ডুলিপি, টেরাকোটা নিদর্শন, ইসলামিক শিল্পকর্ম এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী দেখা যায়।

এটি কি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা?

হ্যাঁ, এটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এবং টিকিটের বিনিময়ে প্রবেশ করা যায়।

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে ঘুরতে কত সময় লাগে?

প্রায় ১.৫ থেকে ২ ঘণ্টা সময় ধরে গ্যালারি ও নিদর্শন পরিদর্শন করা যায়।

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম ঘুরে দেখার টিপস

  • সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মিউজিয়াম খোলা থাকে।
  • শুক্রবারে দুপুরের পরে খোলা হয়।
  • ক্যামেরা ব্যবহারের জন্য আলাদা অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে।
  • গাইড সার্ভিস চাইলে স্থানীয় গাইড পাওয়া যায়।
  • জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় খাবার ও বিশ্রামের সুব্যবস্থা রয়েছে।

উপসংহার

বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম শুধুমাত্র একটি জাদুঘর নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মিলনের এক অসাধারণ নিদর্শন। প্রাচীন বাংলার নিঃশব্দ সাক্ষ্য হিসেবে এটি দাঁড়িয়ে আছে রাজশাহীর বুকে। যারা ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও ঐতিহ্য ভালোবাসেন, তাদের জন্য বরেন্দ্র মিউজিয়াম একটি অবশ্যই দর্শনীয় স্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *