





আহসান মঞ্জিল (Ahsan Manzil) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা একসময় নবাবদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটি জাতীয় জাদুঘরের অধীনে একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থান এবং ঢাকা শহরের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন।
আহসান মঞ্জিল কোথায় অবস্থিত?
আহসান মঞ্জিল অবস্থিত ঢাকার ইসলামপুর এলাকার কুমারটুলি মহল্লায়। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত, এবং নবাব পরিবারের বাসভবন হিসেবেই এটি পরিচিত ছিল।
ইতিহাস ও নির্মাণকাল
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস ১৮৫৯ সালে শুরু হয়। ঢাকার ধনী বণিক খাজা আব্দুল গনি এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। এটি মূলত ছিল ফরাসি বণিকদের কুঠি, যা তিনি কিনে নিয়ে একটি রাজকীয় প্রাসাদে রূপান্তর করেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র নবাব খাজা আহসানুল্লাহ এর নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘আহসান মঞ্জিল’।
১৮৭২ সালে একটি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রাসাদটি পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং ফরাসি ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে নতুনভাবে গড়ে তোলা হয়।
স্থাপত্যশৈলী ও নকশা
আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলীতে ইউরোপীয় রেনেসাঁ এবং মুঘল ঐতিহ্যের প্রভাব লক্ষণীয়। এটি দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত:
- আন্দার মহল (ভবনের পেছনের অংশ) – যা ছিল পরিবারের সদস্যদের বসবাসের জন্য।
- বাহির মহল (সামনের অংশ) – যা অতিথি আপ্যায়ন ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হতো।
ভবনটির একটি প্রধান গম্বুজ রয়েছে এবং গোলাপি রঙের জন্য একে “গোলাপি প্রাসাদ” নামেও অভিহিত করা হয়।
আহসান মঞ্জিল এখন কী?
বর্তমানে আহসান মঞ্জিল একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রাসাদকে জাতীয় জাদুঘরের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে এবং ব্যাপক সংস্কার কাজ পরিচালনা করে। এখানে নবাব পরিবারের ব্যবহার্য সামগ্রী, চিত্রকর্ম, আসবাবপত্র এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
আহসান মঞ্জিল কখন খোলা থাকে?
দিন | সময়সূচি |
---|---|
রবিবার | সাপ্তাহিক ছুটি |
সোমবার | ১৪:৩০ – ১৯:৩০ |
মঙ্গলবার – শনিবার | ১০:৩০ – ১৭:৩০ |
সরকারী ছুটির দিন | বন্ধ থাকে |
(সময়সূচি মৌসুমি ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। ভ্রমণের আগে যাচাই করে নেওয়া ভালো।)
আহসান মঞ্জিলে কি কি দেখা যায়?
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে ২৩টি গ্যালারি রয়েছে। এখানে দেখা যাবে:
- নবাব পরিবারের আসবাবপত্র ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র
- প্রাচীন পেইন্টিং ও ছবি
- ঐতিহাসিক দলিল ও পাণ্ডুলিপি
- নবাবদের ব্যবহৃত পোশাক, অস্ত্র, অলঙ্কার
- ফরাসি ও মুঘল স্থাপত্যের মডেল
কেন ঘুরে দেখবেন আহসান মঞ্জিল?
ঢাকা শহরের ইতিহাস জানতে চাইলে আহসান মঞ্জিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে ভ্রমণের মাধ্যমে পুরান ঢাকার রাজকীয় অতীতের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ অনুভব করা যায়। এটি শুধু স্থাপত্যিক দিক দিয়ে নয়, বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিচ্ছবিও।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে রিকশা, অটোরিকশা কিংবা বাসে ইসলামপুর এলাকায় পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে হাঁটাপথে বা রিকশায় খুব সহজেই আহসান মঞ্জিলে পৌঁছানো যায়। বুড়িগঙ্গা নদীর পাশ ঘেঁষে যাওয়ার পথটিও অত্যন্ত চমৎকার।
প্রবেশ মূল্য
শ্রেণী | প্রবেশ মূল্য |
---|---|
বাংলাদেশি নাগরিক | ২০ টাকা |
বিদেশি নাগরিক | ৫০০ টাকা |
শিক্ষার্থী | ১০ টাকা |
শিশু (৫ বছরের নিচে) | ফ্রি |
(প্রবেশমূল্য সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।)
আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
- লালবাগ কেল্লা
- বাহাদুর শাহ পার্ক
- বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়
- ইসলামপুর বাজার
স্থানীয় খাবার ও কেনাকাটা
আহসান মঞ্জিলের আশপাশের এলাকায় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন কাচ্চি বিরিয়ানি, নান-কাবাব, হালিম পাওয়া যায়। ইসলামপুর বাজার কাপড় এবং ট্র্যাডিশনাল পণ্যের জন্য বিখ্যাত।
প্রশ্নোত্তর (People Also Ask):
আহসান মঞ্জিল কারা বানিয়েছে?
নবাব খাজা আব্দুল গনি মূলত ফরাসিদের কুঠি কিনে এটিকে প্রাসাদে রূপান্তর করেন।
আহসান মঞ্জিলের আরেক নাম কী?
এটিকে “গোলাপি প্রাসাদ” নামেও ডাকা হয় এর গোলাপি রঙের জন্য।
আহসান মঞ্জিলে কীভাবে যাবো?
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে রিকশা/অটোতে ইসলামপুর গিয়ে সেখান থেকে হেঁটে পৌঁছানো যায়।
আহসান মঞ্জিলে কোন কোন জিনিস দেখার আছে?
নবাব পরিবারের ব্যবহৃত আসবাবপত্র, ঐতিহাসিক দলিল, ছবি ও চিত্রকর্ম।
আহসান মঞ্জিল কি আজও ব্যবহার হয়?
বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং দর্শনার্থীদের জন্য খোলা।
উপসংহার
আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। এটি শুধু একটি প্রাসাদ নয়, এটি বাংলাদেশের নবাবি আমলের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। ঢাকা শহরে ঘুরতে গেলে আহসান মঞ্জিল ঘুরে দেখা উচিত প্রতিটি ইতিহাসপ্রেমী এবং পর্যটকের।